প্রাচীন এই রাজবাড়িটি গাজীপুর সদর উপজেলায় অবস্থিত। বাড়িটির নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন জমিদার লোকনারায়ণ রায় কিন্তু এর কাজ শেষ করেন রাজা কালীনারায়ণ রায়। প্রাচীন এই রাজবাড়িটি গাজীপুর সদর উপজেলায় অবস্থিত। বাড়িটির নির্মাণ কাজ শুরু করেছিলেন জমিদার লোকনারায়ণ রায় কিন্তু এর কাজ শেষ করেন রাজা কালীনারায়ণ রায়।
প্রায় ১৫ একর জায়গাজুড়ে মূল ভবনটি বিস্তৃত। উত্তর দক্ষিণে এর দৈর্ঘ্য ৪০০ মিটার এবং ত্রিতল বিশিষ্ট পরিকল্পনায় আকারে নির্মিত।
ভবনটির দক্ষিণ পাশে মূল প্রবেশদ্বার। প্রবেশদ্বারটি বর্গাকার এবং এর ৪ কোণে ৪টি স্তম্ভ স্থাপন করে উপরে ছাদ নির্মাণ করা হয়েছে। প্রবেশ পথের কাঠামোর একদিকের দৈর্ঘ্য ২০ মিটার এবং প্রবেশ দ্বারের পরে একটি প্রশস্ত বারান্দা রয়েছে এর পরে হলঘর। হলঘরের পূর্ব ও পশ্চিমে ৩টি করে বসার কক্ষ রয়েছে। ভবনের ওপরের তলায় ওঠার জন্য ছিল শালকাঠের তৈরি প্রশস্ত সিঁড়ি। ভবনের উত্তর প্রান্তে খোলা জায়গায় রয়েছে 'নাটমন্দির’'। রাজবাড়ির সব অনুষ্ঠান হতো এই মঞ্চে। রাজবাড়ীর মধ্যে পশ্চিমাংশের দ্বিতল ভবনের নাম 'রাজবিলাস'। এ ভবনের নিচে রাজার বিশ্রামাগার ছিল। যার নাম ছিল 'হাওয়া মহল'। দক্ষিণ দিকে খোলা খিলানযুক্ত উন্মুক্ত কক্ষের নাম 'পদ্মনাভি'। ভবনের দোতলার মধ্যবর্তী একটি কক্ষ ছিল 'রানীমহল'নামে পরিচিত। সুরম্য এ ভবনটিতে ছোট-বড় মিলে প্রায় ৩৬০টি কক্ষ আছে। ১৮৯৭ সালে ভুমিকম্পের পর রাজবিলাসসহ অন্যান্য ইমারত পুন:নির্মিত হয়।
বর্তমানে এটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে ।
ভাওয়াল রাজার ইতিহাস-
প্রকৃতির স্নেহে ধন্য রাজধানী ঢাকা থেকে বাইশ কিলোমিটার উত্তরে জয়দেবপুরের ভাওয়াল রাজার পারিবারিক কাহিনীটি এক্সময় বাংলার ঘরে ঘরে লোকগাথা কাহিনী হিসেবে স্থান করে নিয়েছিল। আজ সেই ভাওয়াল রাজবাড়ীর কাহিনী অনেকের হৃদয়ে সুপ্ত হয়ে আছে। ভাওয়াল রাজবাড়ীটি এখন গাজীপুর জেলা প্রশাসক এর কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। যা দেখার জন্য অসংখ্য দর্শনার্থীর ভিড় জমে প্রতিদিন। ৩৬৫ কক্ষ বিশিষ্ট ভাওয়াল রাজবাড়ীর সৌন্দর্য গাজীপুরের ঐতিহ্য হিসেবে চিনহিত হয়ে আছে। ভাওয়াল পরগনার রাজা ভাওয়ালের মেজরাজকুমার রমেন্দ্রনারায়ন কে ঘিরে যে চাঞ্চল্যকর মামলা দীর্ঘদিন ধরে চলছিল টা ভাওয়াল সন্ন্যাসীর মামলা নামে পরিচিত। যার শুরু হয়েছিল ১৯৩০ সালে এবং শেষ হয়েছিল ১৯৪৬ সালে। ১৬ বছর যাবত এ মামলার ফলাফল জানার জন্য সারা দেশের মানুষ শেষ দিন পর্যন্ত উদগ্রীব ছিল। এই মামলার নায়ক ছিলেন ভাওয়াল পরগনার জমিদার বংশের মেজকুমার রমেন্দ্রনারায়ন রায়। তিনি যখন ১৯০৯ সালে দার্জিলিং এ ছিলেন তখন তিনি মারা জান বলে গুজব ছরিয়ে ছিল তাকে ঘিরেই এই মামলা। দীর্ঘ ১২ বছর পর একজন সাধু পরিচয়ে তিনি যখন ঢাকা এলেন, পরে ১৯২১ সালের ৪ মে তিনি নিজেকে কুমার রমেন্দ্রনারায়ন বলে ঘোষণা করলেন, সেই থেকে শুরু হল চাঞ্চল্যকর কাহিনী। ভাওয়াল রাজবংশের ইতিহাসঃ প্রাচীন ঐতিহ্য সম্পন্ন পূর্ববঙ্গের ভাওয়াল পরগনার বিস্ত্রিতি ছিল ময়মনসিংহ ও ঢাকা জেলার দুটি অঞ্চল জুরে। ভাওয়ালে বহু প্রাচীন মন্দির,প্রাসাদ, গড়, সরোবর ও মূর্তির ভগ্নাবশেষ আছে। ভাওয়াল রাজবংশীয় ইতিহাস একটি সুদীর্ঘ ও অবছিন্ন ধারাবাহিক ঘটনা। সুদুর অতীতে এই ভাওয়াল অঞ্চল যে সেন বংশীয় রাজাদের অধিকারভুক্ত ছিল সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। সেন বংশ এদেশে পুরব্বং সহ ভারতীয় বেশ কিছু এলাকা নিয়ে রাজত্ব করত এবং এই রাজত্ব কাল প্রায় ১২০ বছর ছিল। খ্রিস্টীয় চতুর্দশ শতাব্দী তে পূর্ববঙ্গ মুসলমানদের অধিকারে আসে।তাদের কতৃত্ব ছিল পূর্বে ব্রহ্মপুত্র, উত্তরে আড়িয়াল খাঁ ও দক্ষিন-পশ্চিম এ শিতলক্ষ্যা নদী পর্যন্ত। ভাওয়াল পরগনাও তাদের অধিকারে চলে আসে।এই পূর্ব বঙ্গ পূর্বে সেন বংশীয় মধু সেন ও অনুজ মাধবের অধিকার ভুক্ত ছিল এবং সেন বংশের পতনের পরেও সেনবংশিয় সেনাপতি প্রতাপ রায় ও প্রসন্ন রায় কিছুদিনের জন্য রাজবাড়ীতে স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। এদের পতনের পর ভাওয়ালের বারভূঁইয়াদের অন্যতম ফজল গাজীর অধিনে আসে। তারা কালীগঞ্জ ও মাধবপুরে বাস করেন। তিনি মাধবপুর কে গাজীবাড়ি নামে পরিবর্তন করেন। ফজল গাজীর পর দৌলত গাজী ভাওয়ালের অধিপতি হন ও তার সময়েই নানা কারনে সম্পত্তি নিলাম হয়ে যায়। রাজ্যের সীমা নিয়ে ঢাকার নবাব্দের সঙ্গে বিরোধ হয় এবং মামলা চলে। বিক্রমপুরের কেশব পন্দিতের রামচন্দ্র চক্রবর্তী নামে এক পুত্র ছিল যিনি বিদ্যাশিক্ষার জন্য মুর্শিদাবাদের নিকটস্থ গোকর্ণ গ্রামের জনৈক অধ্যাপকের সঙ্গে ছিলেন। পরবর্তীতে অই অধ্যাপকের কন্যার সাথে রামচন্দ্রের বিয়ে হয় এবং মুরশিদাবাদেই তারা অবস্থান করেন।কিছুদিন পরে রুদ্রচক্রবর্তী ও নারায়ন চক্রবর্তী নামে রামচন্দ্রের দুই ছেলের জন্ম হয়। তারাও বিদ্যা শিক্ষায় আগ্রহী ছিল। উকিল কুশদ্ধজ রায় নারায়ন চক্রবর্তীর ছেলে ছিলেন। তিনি বিদ্যাশিক্ষায় বেশি অগ্রসর না হয়ে মুর্শিদাবাদের উকিল পদে নিযুক্ত হন এবং নবাব সরকার তাকে ‘রায়নারায়ন’ উপাধিতে ভূষিত করেন।রুদ্র চক্রবর্তীর মৃত্যুর পর তার ছেলেদের সাথে কুশদ্ধজ রায়ের বিবাদ হলে তিনি দৌলত গাজীর নিকট আবাসন প্রার্থনা করেন। দৌলত গাজী তার উপর পূর্ব সন্তুষ্টির কারনে জয়দেবপুরের নিকটস্থ ‘চান্দনা’ গ্রামে একটি বাড়ি ও কিছু জমি প্রদান করেন। কুশদ্ধজ রায়ের মারা জাবার পর তার ছেলে বলরাম রায় দেওয়ানী পদে নিযুক্ত হন।
Social Plugin