গোবিন্দচন্দ্র দাস(১৮৫৫-১৯১৮) –
তাঁর জন্ম, জয়দেবপুর, ভাওয়াল-গাজীপুর, ৪ মাঘ ১২৬১ (জানুয়ারি ১৮৫৫)। এক দরিদ্র কায়স্থ
পরিবারে জন্ম । পাঁচ বছর বয়সে তাঁর পিতা রামনাথ দাসের পরলোক গমন করেন।
ভাওয়াল–রাজ কালীনারায়ণ রায়ের অন্নে ও অনুগ্রহে লালিত-পালিত
ও শিক্ষা প্রাপ্ত হন তিনি । জয়দেবপুর মাইনর স্কুল থকে ছাত্রবৃত্তি পাস করে ঢাকা
মেডিকেল স্কুলে ভর্তি । শব ব্যবচ্ছেদের
ভয়ে চিকিৎসাবিদ্যালয় পরিত্যাগ করেন । ভাওয়ালের কুমার রাজেন্দ্রনারায়ণ রায়ের
প্রাইভেট সেক্রেটারি নিযুক্ত । জনৈক প্রজাপীড়ক কর্মচারীকে ভাওয়াল-রাজ কর্তৃক কঠোর
দন্ড প্রদান না করার প্রতিবাদে চাকরি ত্যাগ(১৮৭৭) করেন । কাজের সন্ধানে ময়মনসিংহ
আগমন করেন। সুসঙ্গ -দুর্গাপুরের জমিদার মহারাজ কমলকৃষ্ণ সিংহের খাজাঞ্চি পদে
নিযুক্ত লাভ(১৮৭৯) করেন । পরের বছর মুক্তগাছার জমিদার মহারাজ কেশবচন্দ্র আচার্য
চৌধুরীর কার্যকারক নিযুক্ত(১৮৮০) হন ।
১৮৮২ সালে ময়মনসিংহ প্রবেশিকা বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় পণ্ডিতের পদে যোগদান । স্কুলটি
উঠে গেলে ময়মনসিংহ সাহিত্য সমিতির আধ্যক্ষ নিযুক্ত হন । ১৮৮৪-তে শেরপুরে
‘চারুবার্তা’ পত্রিকার কার্যাধ্যক্ষের পদ গ্রহন করেন । ১৮৮৬-তে শেরপুরের জমিদার
হরচন্দ্র রায়চৌধুরী কর্তৃক তাঁর জমিদারির কৃষি
বিভাগের ইন্সপেক্টর নিযুক্ত হন । ১৮৮৮-তে হরচন্দ্রের প্রাইভেট
সেক্রেটারি পদে যোগদান ।কলকাতার সাপ্তাহিক
‘নবযুগ’ পত্রিকায় ভাওয়ালের রাজা রাজেন্দ্রনারায়াণ রায় (কালীনারায়ণ রায়ের মৃত্যুর পর উনি ই রাজা হন) ও রাজমন্ত্রী
সুপ্রসিদ্ধ সাহিত্যিক কালীপ্রসন্ন ঘোষের অনেক অপ্রীতিকর প্রসঙ্গের অবতারণা করে এক
প্রবন্ধ গোবিন্দচন্দ্রের রচিত বলে কালীপ্রসন্ন ঘোষ্রাজার কর্ণগোচর করেন ।
গোবিন্দচন্দ্রের বক্তব্য অনুসারে কথিত প্রবন্ধটির লেখক তিনি নন,অন্য কেউ । কালীপ্রসন্ন ঘোষের কথায়
বিভ্রান্ত হয়ে রাজা তাঁকে জয়দেবপুর থেকে নির্বাসন দেন (ফেব্রুয়ারি-মার্চ ১৮৯২) । গোবিন্দচন্দ্র
জয়দেবপুর ত্যাগ করে কর্মস্থল শেরপুর চলে যান । তিনি ‘মগের মুল্লুক’
(১৮৯২) নামে একখানি বঙ্গকাব্য রচনা করে তাঁকে তাঁর জন্মভুমি জয়দেবপুর থেকে
অন্যায়ভাবে বিতাড়িত করার প্রতিশোধ নেন । ভাওয়াল রাজ্যের প্রজামণ্ডলীর উপর রাজার
অমানুষিক পৈশাচিক কাহিনী এতে অগ্নিময়ী ভাষায় উপস্থাপিত । প্রথমা পত্নী
সারদাসুন্দুরীর মৃত্যুর প্রায় সাত বছর পর বিক্রমপুরের ব্রাহ্মণগ্রামে শ্বশুরালয়ে
গৃহ নির্মাণ করে তথায় বাস । ১৮৯৫-এ কলকাতায় নব্য ভারত প্রেসের কার্যাধ্যক্ষের পদ
অংকৃত । ১৮৯৬-এ মুক্তগাছার জমিদার মহারাজ সুর্যকান্ত আচার্য চৌধুরী কাশহাটি
কাছারীর নায়েব নিযুক্ত । ১৮৯৮-এ বেগুনবাড়িকাছারীতে বদলি । ১৯০২-এ কর্মত্যাগ ।
আজীবন দরিদ্রাবস্থায় দিন যাপন । জীবনে ১০/১২ টি চাকরীতে নিয়োজিত ছিলেন ।
অব্যবস্থিত চিত্ততার জন্য কোন চাকরিই দীর্ঘকাল করতে পারেননি । স্বীয় ত্রুটির জন্য
অনেকবার কর্মচ্যুত হয়েছেন । স্বভাব কবি হিসেবে খ্যাত । নারীভক্তি, পতি-পত্নীর
প্রেম, ভ্রাতৃস্নেহ, সন্তানবাৎসল্য, বন্ধুপ্রীতি, গার্হস্থ্য জীবনের সুখ-দুখের
কাহিনী, পল্লীজিবনের আলেখ্য, জাতীয় উদ্দিপনা ও স্বদেশপ্রেম তাঁর কবিতায় নিরাভরণ
ভাষায় চিত্রিত । কবিতাগ্রন্থঃ প্রেম ও ফুল(১৮৮৭), কুস্কুম(১৮৯১), মগের
মুল্লুক(১৮৯২), কস্তরী(১৮৯৫), চন্দন(১৮৯৬), ফুলরেণু(১৮৯৬), বৈজয়ন্তী(১৯০৫), শোক ও
সান্ত্বনা(১৯০৯) ।
১৯১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
১৯১৮ সালের সেপ্টেম্বর মাসে ঢাকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
তথ্যসূত্রঃ বাংলা একাডেমি -বাংলাদেশের লোকজ সংস্কৃতি গ্রন্থমালা
পূর্ববর্তী পোষ্টঃ
0 Comments